ওয়াইল্ডারনেস টিপস – অনুবাদ

গল্প

ওয়াইল্ডারনেস টিপস

ওয়াইল্ডারনেস টিপস

মূল: মার্গারেট এটউড

অনুবাদ: সেলিম মিয়া


জর্জ বলেছিল, ‘প্রু তো বাধ্যবাধকতা বোঝে না। (এ কথা যথেষ্ট সত্য। সে বুঝত না। আর জর্জের এই অন্তর্দৃষ্টি মুগ্ধকর।) তুমি অবশ্য বোঝো। আমি হচ্ছি মেহমান, আর তুমি হচ্ছো মেজবান।‘

পামেলা মনে হয় শুনছিল না। বলেছিল, ‘মেজবানী। “মেজবান” হচ্ছে পুরুষ, যেমন—হোটেলের অতিথি কিংবা কমিউনিয়নে তুমি যে বিস্কুট খাও সেটা। অথবা সব পরজীবী যে শুককীটের ওপর ডিম পারে সেগুলো।‘

জর্জ হেসে বলেছিল, ‘তোমার বোন খুবই বুদ্ধিমতী।‘ জর্জ এমনভাবে বলেছিল যেন পামেলার এ গুণটা একটা কৌতূহল ছিল, কিংবা হয়ত বিকৃতি ছিল। পামেলা জর্জকে খাঁটি রাগের এক চাহনি নিক্ষেপ করেছিল। আর তারপর থেকে সে জর্জের সাথে আর কোনও চেষ্টা চালায়নি। পামেলা যতটুকু জানে জর্জও নিথর হয়ে থাকতে পারে।

কিন্তু পামেলার উদাসীনতায় পোর্শিয়া কিছু মনে করে না। বরং সে লালন করে। এক সময় সে অনেকটা প্রুর মতো হতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন পামেলার মতো হতে চায়। পঞ্চাশের দশকে পামেলাকে মনে করা হত খুব খেয়ালী, অদ্ভূৎ ও সাদাসিধা হিসেবে। এখন মনে হয় শুধু তাদেরই একজন হিসেবে যারা ঠিক ছিল। স্বাধীনতা মানে অনেক পুরুষ থাকা নয়। যদি আপনার মনে হয় যে, আপনার থাকতে হবে, তাও নয়। পামেলা যা চায় তা-ই করে, এর কমও না বেশিও না।

এটা একটা ভালো বিষয় যে মহাবিশ্বে একজন নারী আছে যে জর্জকে নিতেও পারে আবার তাকে তার মতোও থাকতে দিতে পারে। পোর্শিয়ার ইচ্ছা হয় সে নিজে যদি এত ঠাণ্ডা হত। এমনকি বত্রিশ বছর পরেও সে এখনও প্রেমের দম আটকানো ও দমহীন অবস্থায় পড়ে আছে। প্রথম রাতে জর্জ যখন তাকে চুমু খেতে নিচু হয়েছিল (সান্ধ্যকালীন নৌভ্রমণের পর নৌঘরের নিচে) এবং গাড়ির হেডলাইটের আলোকরশ্মিতে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হরিণের মতো সেখানে দাঁড়িয়েছিল, যখন বিশাল ও অনিয়ন্ত্রণযোগ্য কিছু তার ওপর চেপে বসেছিল, আর সে ব্রেক ও সংঘর্ষের আঘাতের অপেক্ষায় ছিল, সেই সময় আর এই সময়ের কোনও তফাৎ নেই। কিন্তু এ চুমু সে ধরণের চুমু ছিল না। যৌনতাও ছিল না যা জর্জ তার কাছ থেকে চেয়েছিল। জর্জ চেয়েছিল অন্য কিছু—স্ত্রীসুলভ সাদা তুলার ব্লাউজ, দোলনা বিছানা। জর্জের মন খারাপ যে, তাদের কোনও সন্তান ছিল না।

জর্জ তখন এমন সুন্দর পুরুষ ছিল। সুন্দর পুরুষ অনেকেই ছিল, কিন্তু তার তুলনায় অন্যদের মনে হত খালি খালি, অলিখিত। সে-ই একমাত্র পুরুষ যাকে পোর্শিয়া সব সময় চেয়েছিল। যদিও সে তাকে পায় না, কারণ কেউই তা পায় না। জর্জ উপভোগ করে, আর ছেড়ে দেয় না।

এটাই প্রুকে চালিত করে। সে চায় চূড়ান্তভাবে জর্জকে ধরে রেখে তার মনের কথা বলিয়ে তার কাছ থেকে ছাড় আদায় করতে। প্রুর জীবনে সেই একমাত্র ব্যক্তি যাকে সে কখনই ভয় দেখাতে পারেনি কিংবা উপেক্ষা করতে পারেনি অথবা প্রতারিত করতে পারেনি বা হ্রস্ব করতে পারেনি। পোর্শিয়া সব সময়ের জন্য বলতে পারে প্রু কখন আক্রমণ করতে ফিরে এসেছে। বলার মতো চিহ্ন আছে, কোনও সংযুক্ত কণ্ঠস্বর ছাড়াই ফোন কল আছে, জর্জের কাছ থেকে আন্তরিক, বিষাদিত মিথ্যা বলা আছে যে মিথ্যা আসলে সত্যকেই প্রকাশ করে। জর্জ জানে, প্রু জানে। কিছু না বলার জন্য প্রুকে জর্জ মূল্য দেয়। আর প্রু নিজে মূল্য পেতে চায়।

এখন যদিও কিছুই হচ্ছে না। এ মুহূর্তে নয়, এখানটায় নয়, ওয়াকুস্টা লজে নয়। প্রুর সাহস হবে না, জর্জেরও না। জর্জ জানে প্রুর সীমারেখা কোথায়। জানে প্রুর নীরবতার মূল্য।

পোর্শিয়া ঘড়ির দিকে তাকায়। তার ঘুম শেষ। যথারীতি তা বিশ্রামপূর্ণ হয়নি। ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানির ঝাপটা লাগায় সে। হালকা করে ক্রিমও লাগায়। চোখের চারপাশে মাখে। এ বয়সে প্রশ্নটা হচ্ছে কোন ধরণের কুকুরের সাথে আপনার শীঘ্রই মিলবে। সে ছোট-খাটো বিগল কুকুর হবে, প্রু হবে ছোট-খাটো সক্রিয় টেরিয়ার কুকুর, পামেলা হবে আফগান কুকুর কিংবা সমানভাবে অপার্থিব কিছু একটা।

পোর্শিয়ার প্রপিতামহ আয়নায় তাকে দেখে অগ্রাহ্য করেন যেমনটা সব সময় করে এসেছেন। যদিও পোর্শিয়া জন্মানোর অনেক আগেই তিনি মারা গেছেন। পোর্শিয়া তাকে বলে, ‘আমার সাধ্যমতো আমি করেছিলাম। তোমার মতো মানুষ দেখে বিয়ে করেছিলাম। ডাকাত রাজা।‘ তার কাছে কিংবা অন্য কারও কাছে স্বীকার করবে না যে, এটা সম্ভবত তার ভুল হয়ে থাকতে পারে। (কেন তার বাবা তার অভ্যন্তরীণ জীবনে এসে হাজির হয় না? কারণ তার বাবা ছিলেন না, ছবি হিসেবেও না। তিনি ছিলেন অফিসে। গ্রীষ্মকালেও, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে তিনি থাকতেন না।)

জানালার বাইরে রোলান্ড কাঠ চেরা থামিয়ে গুড়ির ওপর বসে আছে। বাহুদুটো হাঁটুতে রেখে বড় বড় হাতদুটো দোলাচ্ছে, আর গাছ-গাছালির দিকে তাকিয়ে আছে। পোর্শিয়ার প্রিয় সে। সেই সব সময় পোর্শিয়াকে রক্ষার্থে এগিয়ে আসত। পরে আর আসেনি পোর্শিয়া যখন জর্জকে বিয়ে করেছিল। প্রুর সামনাসামনি থাকলে রোলান্ড ফলপ্রসূ হত, কিন্তু জর্জ তাকে বিভ্রান্ত করত। বিস্ময়ের কোনও কারণ নেই। পোর্শিয়া ভালোবাসার দেয়াল নির্মাণ করে জর্জকে সুরক্ষা করে। পোর্শিয়ার অবুঝ ভালোবাসা।

জর্জ কোথায়? তাকে খুঁজতে পোর্শিয়া সারা বাড়ি ঘুরে দেখে। দিনের এ সময় সে সাধারণত ড্রয়িং রুমে সোফার ওপর সটান হয়ে থাকে, ঝিমায়। কিন্তু সে তো সেখানে নেই। পোর্শিয়া খালি ঘরটা ঘুরে দেখে। সব কিছুই স্বাভাবিক আছে। স্নো-শুগুলো  দেয়ালে, যে ভূর্জ বাকলের ক্যানো নৌকা দিয়ে সে সব সময় খেলতে চাইত, কিন্তু পারত না তা স্মৃতিচিহ্ন বলে, সে নৌকা আছে, ভাল্লুকের বিবর্ণ পশমি চামড়া দিয়ে তৈরী কার্পেটটা আছে। এক সময় এই ভাল্লুকটা বন্ধু ছিল। এর নামও ছিল। কিন্তু পোর্শিয়া তা ভুলে গেছে। বুকসেল্ফে আছে খালি কফি কাপ। এটা ভুল করে রাখা হয়েছে। সেল্ফে থাকার কথা না। পোর্শিয়া যখন জানে যে, জর্জ প্রুর সাথে আছে, তখন তাকে প্রথম যে অনুভূতিটা নাড়া দেয় তা হলো অসাড়তা যা মেরুদণ্ডের গোড়ায় শুরু হয়। কিন্তু না, প্রু তো পর্দাঘেরা বারান্দার দোলনায় আছে, ম্যাগাজিন পড়ছে। তার দুটো রূপ তো থাকতে পারে না।

জানা উচিৎ না জেনে পোর্শিয়া জিজ্ঞেস করে, ‘জর্জ কোথায়?’

প্রু বলে, ‘আমি তার কী জানি?’ তার কথার সুরে বিরক্তি, যেন সেও একই জিনিস ভাবছে। ‘কী হয়েছে? সে কি তার লাগাম থেকে ছাড়া পেয়েছে? মজার তো। এখানে তো কোনও আকর্ষণীয় বোকাসোকা যুবতী নেই।‘ সূর্যের আলোয় প্রুর চাহনি বিপর্যস্ত থাকে। অতিমাত্রায় কমলা লিপস্টিক তার মুখের চারপাশে ছোট ছোট ভাঁজ বুনছে। তার সামনের ঝোলা চুলগুলো নির্লজ্জের মতো আছে। সব কিছু কেমন যেন হচ্ছে।

পোর্শিয়া বলে, ‘নোংরা হওয়ার দরকার নেই।‘ এ কথাই তাদের মা প্রুকে বলত। বলত ভেঙ্গে ফেলা পুতুল নিয়ে, ধ্বংস করা বালু বাক্সের গ্রাম নিয়ে, চুরি করে দেয়ালে ছুড়ে মারা এক বোতল  নখ পালিশ নিয়ে। আর তখন প্রতিবার লা-জবাব থাকত। কিন্তু এখন তো বলার মতো তাদের মা এখানে নেই।

প্রু জোরালোভাবে বলে, ‘আছে, একটা দরকার আছে।‘

পোর্শিয়া সাধারণত না শোনার ভান করে হেঁটে চলে যেত। এখ বলে, ‘কেন?’

প্রু বলে, ‘কারণ সব কিছুর সবচেয়ে ভালোটা তুমি পেয়ে আসছ।

পোর্শিয়া অবাক হয়। নিশ্চয়ই সে তো নিরীহ একজন, একটা ছায়া। প্রুর পাগলা নাচিয়ের সাথে সে কি সব সময় নাচেনি? সে বলে, ‘কী? সব সময় আমি কী পেয়ে আসছি?’

তিক্ততার সাথে প্রু বলে, ‘সব সময় তুমি কথায় ভালো হয়ে আসছ। তা তার সাথে থাক কেন? তাহলে কি টাকা?’

নম্রভাবে পোর্শিয়া বলে, ‘তাকে যখন বিয়ে করি, তখন তার এক আনাও ছিল না। বলে ভাবছে সে প্রুকে ঘৃণা করে কিনা। আসল ঘৃণায় কেমন বোধ হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় সে। যা হোক, প্রু তো ঐ শক্ত-সমর্থ, দুষ্ট শরীরকে হারাচ্ছে যে শরীরের সে অনেক ক্ষতি করেছে। আর এখন সেই শরীর চলে যাচ্ছে। তার কী থাকবে এখন? অস্ত্র হিসেবে সেটাই তো আছে।

প্রু বলে, ‘তুমি বলতে চাচ্ছ সে তোমাকে যখন বিয়ে করে, মা যখন তোমাকে বিয়ে দেয়। তুমি তো শুধু দাঁড়িয়ে ছিলে, আর তাদের দুজনকে এটা করতে দিয়েছিলে, ঠিক যেমন ছোট্ট চোষক ছিলে তুমি।‘

পোর্শিয়া ভাবে এ কথা সত্য কিনা। তার ইচ্ছা হয় কয়েক দশক পিছনে গিয়ে আবার বড় হতে। প্রথম বার সে কিছু একটার অভাব অনুভব করল, একটা পর্যায়ের অভাব অনুভব করল, কিংবা অন্য মানুষের যে অপরিহার্য তথ্য ছিল বলে মনে হয়েছিল তার অভাব অনুভব করল। এবার সে ভিন্ন কিছু বেছে নেবে। কম অনুগত থাকবে। অনুমতি চাইবে না। বলবে না, ‘আমি করি।‘ বলবে, ‘আমিই।‘

প্রু বলে, ‘তুমি কেন কখনও ফিরতি জবাব দিতে না?’ তাকে আসলেই বিক্ষুব্ধ লাগছে।

জলাশয়ের ডকের দিকের পথটা দেখতে পাচ্ছে পোর্শিয়া। খাদি কাপড়ের ফোল্ডিং চেয়ারটিতে কেউ নেই। নিচে গুঁজে থাকা জর্জের পত্রিকাটা পত পত করে উড়ছে। বাতাস আসছে। চেয়ারটা সরানোর কথা জর্জ নিশ্চয়ই ভুলে থাকবে। এটা তো তার সাথে যায় না।

প্রুকে সে বলে, ‘এক মিনিট।‘ এমনভাবে বলে যেন পঞ্চাশ বছর ধরে নানাভাবে চলা এ আলাপচারিতায় তারা এখন ছোট্ট একটা বিরতি নিতে যাচ্ছে। দরজার পর্দা সরিয়ে পথটির দিকে যায় সে। জর্জ কোথায় গেছে? সম্ভবত বহিঃস্থ ঘরে। কিন্তু তার খাদির চেয়ারটা তো পালের মতো দোল খাচ্ছে।

চেয়ারটি ভাঁজ করে রাখতে সে নিচু হয়, আর শুনতে পায়। নৌঘরে কে যেন আছে। ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে, নিঃশ্বাস নিচ্ছে। একটা শজারু দাঁড় থেকে লবণ খাচ্ছে? প্রকাশ্য দিবালোকে নয়। না, একটা কণ্ঠস্বর। পানি চিক চিক করছে। ছোট ছোট ঢেউ ডকে এসে আছড়ে পড়ছে। এটা প্রু হতে পারে না। প্রু তো বারান্দায় আছে। ওর মায়ের মতো শোনাচ্ছে। যেন ওর মা জন্মদিনের উপহার খুলছে। খুলছে চমকে দেওয়া ও প্রায় বিস্ময়-বেদনার সেই কোমল লয়। ও-ও-ও। অন্ধকারে কারও বয়স অবশ্য আপনি বলতে পারবেন না।

চেয়ারটি ভাঁজ করে নৌঘরের দেয়ালে আলগোছে হেলান দিয়ে রাখে পোর্শিয়া। পত্রিকা হাতে নিয়ে পথটি ধরে যায়। সারাটি জলাশয়ে উড়ে পড়তে দেওয়ার কোনও মানে হয় না। পরিষ্কার ঢেউগুলিকে বাসি খবরের সাথে মিশিয়ে, মানুষের আর্দ্র শোকের সাথে মিশিয়ে নোংরা করার কোনও মানে হয় না। অর্থনৈতিক পাতাগুলোতেও কামনা, লোভ ও ভয়ঙ্কর হতাশা। আপনাকে যদিও পড়ে পড়ে এর মর্মার্থ উদ্ধার করতে হবে।

বাড়ির ভেতরে যেতে চায় না সে। কাঠের চালাটি এড়িয়ে রান্নাঘরের পিছনে ঘোরাফেরা করে। এই চালাটিতে সে শুনতে পায় রোলান্ডের কাঠ স্তূপীকৃত করার খট খট শব্দ। যে পথটি ছোট, বালুকাবেলার দিকে চলে গেছে সেই পথ ধরে ফিরে যায়। আর ডক থেকে ঝাঁপাঝাঁপি করার মতো যথেষ্ট বড় হওয়ার আগে এই বালুকাবেলাতেই তারা সবাই শিশুকালে সাঁতার কেটেছিল। এখানে মাটির ওপর এখন সে শুয়ে পড়ে ঘুমাতে যায়। ঘুম থেকে জাগলে দেখে দেবদারুর কাঁটা তার গালে লেগে আছে। তার মাথা ধরে। আকাশে বেলা পড়ে গেছে। বাতাস নেমে গেছে। আরও কোনও ঢেউ নেই। একেবারে নিশ্চল সব কিছু্। মোটরনৌকার ভট ভট শব্দের বিরক্তি না শুনে কাপড়-চোপড় খোলে সে। আর মোটরনৌকাগুলো এত দ্রুত যায় যে এগুলোর কাছে সে শুধুই ঝাপসা এক আকৃতি।

জলাশয়টিতে হেঁটে যায় সে। যেন আয়নার স্তরের মধ্যে নিঃশব্দে ঢুকে যায়—কাচের স্তর, রূপালি স্তর। নিচে চলে যাওয়া নিজের পা, নিজের বাহুর প্রতিরূপের সাক্ষাৎ পায়। পানির ওপরে শুধু মাথাটা রেখে ভাসতে থাকে। সে নিজেই পনেরতে, নিজেই বারোতে, নিজেই নয়ে, ছয়ে। পরিচিত প্রতিচ্ছবির সাথে সংযুক্ত তীরে আছে একই শিলা, সব সময় ধরে থাকা একই শাদা কাণ্ড। জলাশয়টির হিমেল নীরবতা যেন স্বস্তির দীর্ঘশ্বাসের মতো। এটা জানা নিরাপদ যে, এ কাণ্ডটা তার কাণ্ড, শিলাটা তার শিলা। আরও নিরাপদ যে, কোনও কিছুই কখনও পরিবর্তিত হবে না।

দূরের বাড়িটা থেকে মৃদু ঘন্টা বাজে। নৈশভোজের ঘন্টা। এখন পামেলার রান্না করার পালা। কী খাবে তারা? আজব উদ্ভাবন। খাদ্যের ব্যাপারে পামেলার নিজের ধারণা আছে।

ঘন্টাটি আবার বাজে। আর পোর্শিয়া জানে যে, অশুভ কিছু ঘটছে প্রায়। এটা এড়াতে পারত সে। দূরে সাঁতরে যেতে পারত। গিয়ে ডুবে থাকতে পারত।

তীরের দিকে জলরেখায় তাকায় সে। জলাশয়টার শেষ এখানে এবং আর অনুভূমিক থাকে না। মনে হয় তেরছা হয়ে আছে যেন নিচের শিলায় অবনতি ঘটেছে, যেন গাছগুলো, গ্রানাইটের উপরি শিলাখণ্ডগুলো, ওয়াকুস্টা লজ, উপদ্বীপ, পুরো মূল ভূখণ্ডটি ক্রমশ সরে সরে যাচ্ছে, ডুবে যাচ্ছে। সে একটা নৌকার কথা চিন্তা করে, বিশাল একটা নৌকার কথা, যাত্রীবাহী বিশাল একটা জাহাজের কথা, যা কাত হচ্ছে, অবতরণ করছে, যেখানে বাতি জ্বলছে, সঙ্গীত বাজছে, লোকজন কথা বলেই যাচ্ছে, আর তাদেরকে ইতোমধ্যে আক্রান্ত করা বিপর্যয় সম্পর্কে তারা তখনও অসচেতন। সে নিজেকে দেখছে যে, বলরুমের মধ্য দিয়ে উলঙ্গ হয়ে ছুটে চলছে সে।  দেখছে আজগুবি, ব্যাঘাতজনক একটা মূর্তি যার চুলগুলো থেকে ফোটায় ফোটায় পানি ঝরছে এবং যার বাহুদুটো অনিয়ন্ত্রিত গতিতে নড়ছে। দেখছে সেই মূর্তি তাদের দিকে চেঁচিয়ে বলছে, ‘দেখতে পাও না? ভেঙ্গে পড়ছে, সব কিছু ভেঙ্গে পড়ছে, তুমি ডুবে যাচ্ছ। তুমি শেষ, তুমি খতম, তুমি মরে গেছ!’

পোর্শিয়া অবশ্য অদৃশ্য থাকবে। কেউ-ই তাকে শুনতে পাবে না। আর আসলেই কিছু ঘটেনি, যা আগে ঘটেনি।

***পরিসমাপ্তি***


৪র্থ পর্ব

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*