চারটি কবিতা

কবিতা

চারটি কবিতা

-সেলিম মিয়া


সাঁওতালি সন্ধ্যা

সারাটি দিনের কর্ম ঘর্মে স্নান শেষে

বাগদার ক্লান্ত চোখ যখন স্বপনে মেশে

অরণ্য-অঞ্চলে দাঁত শাণায় তখন

বিষধর অজগর হিংস্র ভূখে

বাতাসে মহড়া দেয় ফণা ঠুকে।

আচমকা ঘনায় আঁধার

এধার ওধার চারিধার

ভয়ংকর

অজগর

মুখ খুলে

গিলে খায় সাঁওতালি সন্ধ্যা লেলিহান ফণা তুলে।

তাদের স্বপ্নের সন্ধ্যা যেন একলভ্য-বৃদ্ধাঙ্গুলি

যেখানে সটান শুয়ে পড়ে থাকে সাধের গোধূলি।

মায়াবি নেকাব যদি তুমি ফেলো খুলে

দেখবে কীভাবে সেথা তবু আলো জ্বলে

ভূখা পেটে থেকে যারা ফিরিয়ে দিয়েছে ত্রাণ

আত্মারে এভাবে যারা দেয় পরিত্রাণ

সাঁওতাল তাদের নাম, নিখাদ সন্তান।

যদি চলে যেতেই হয়

যদি চলে যেতেই হয়

চিরদিনের প্রীতির দাম মুহূর্তে না চোকানোই রীতি।

যদি কাছে আসতেই হয়

মুহূর্তের প্রেমের দাম চিরদিন দিতে নেই।

যদি ফিরে আসতেই হয়

ভালবেসে খানাখন্দেও আনন্দ খোঁজা চাই।

যদি ভালবাসতেই হয়

নদীর মতো নিঃশর্ত প্রবাহ থাকা প্রয়োজন।

যদি রাগ কিংবা অভিমান করতেই হয়

দিনের শেষে ফিরে আসার আকুতি থাকা চাই।

যদি ভুল হয়েই যায়

ভালবেসে শোধরানোর সময় দেয়া চাই।

যদি জীবন থমকে দাঁড়ায়

সামনে এগিয়ে নেয়াই জীবন।

যদি নিয়ম ভাঙতেই হয়

নিয়ম জেনে নিয়ম মেনে নিয়ম ভাঙাই নিয়ম।

আমার দেবী আমার ঈশ্বর

দেবীকে ফেলে চলে যায় দেবতা

তাকেও নিয়ম মানতে হয় বলে।

দেবতার অভাবে দেবীর বেদনা বোঝে না অধম;

শূন্যতা বুকে ভরে দূর পানে চেয়ে থাকে শত কোলাহলে

আমার দেবী আমার ঈশ্বর।

কত কথা আটকে থাকে বুকে তার

শুধাবে আমায়

শুধানো আর হয় না, শুধানো যায় না;

কত কষ্ট সমাহিত করে শুকনো অশ্রুর আড়ালে

আমায় কষ্ট দেবে না বলে।

নিজের সকল প্রয়োজন গোপন করে

বেশি কিছু করা যায় না;

অনেক ক্ষণ দেখতে চেয়েও তাই আমায় দেখে কিছুক্ষণ

অনেক কিছু বলতে চেয়েও তাই থাকে নির্বাক।

জীবনের নিষ্ঠুরতম আয়োজনে

এক গ্লাস জল দেবার সামর্থ্যটুকু নেই মা দেবী আমার,

তবু হৃদয় উৎসারিত অশ্রুটুকু শুধু নিও।

অনুনাদ

ম্যাপল আঁধার চিরে ফুটে উঠেছে নবমীর উষ্ণতা।

ল্যাম্পোস্টের লম্পট পতঙ্গ ঠেলে

হাঘরে হাঙরের মতো গোগ্রাসে গিলেছি তা।

সেই থেকে অস্থির আমার অনভ্যস্ত ছায়াপথ।

সৌরমণ্ডলের নাভিগোলক

পায়ে হেঁটে প্রদক্ষিণ করে দেখি

নরম নীহারিকা নহর সৌর-দস্যুর হাতে পণবন্দী।

আমার কোনও গ্রহযান নেই

তবুও অভিজ্ঞ ওকের মতো নতজানু হয়ে ছুঁতে চেয়েছি

ব্রহ্মাণ্ডের চোরাবালি বাষ্পাধর।

আমার আঙুল এখন মহাকালের পাঁজরে

অক্ষম অনুবাদে ব্যস্ত।

আমার হৃৎপিণ্ডের যে ধুক ধুক

তার সবটুকু তারই অস্ফুট অনুনাদ।


Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*