আইসিস ইন ডার্কনেস – অনুবাদ

গল্প

আইসিস ইন ডার্কনেস

আইসিস ইন ডার্কনেস

মূল: মার্গারেট এটউড

অনুবাদ: সেলিম মিয়া


সেলিনা এখানে এলো কীভাবে? এ প্রশ্নটাই রিচার্ড নিজেকে করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, যখন সে আবার তার টেবিলে বসে ফিলিং কার্ডগুলো নাড়াচাড়া করে আবার শুরু করতে চেষ্টা করে।

উত্তরের ভাণ্ডার আছে তার কাছে। নীলাভ সবুজ ও পান্না-সবুজে তৈরি বিশাল একটা বেলুনে করে সেলিনার ছাদের দিকে ভেসে যাওয়ার কিংবা চায়না চায়ের কাপে অঙ্কিত সোনালি পাখির মতো পিঠে তার পৌঁছানোর দৃশ্য কখনও কখনও কল্পনা করে সে। বৃহস্পতিবারকে সে জানে সেলিনার ক্যালেন্ডারে অশুভ দিন হিসেবে। এ বৃহস্পতিবারের মতো অন্য অন্ধকারময় দিনগুলোতে সেলিনা দীর্ঘ ভূ-গর্ভস্থ সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে যায়। সুড়ঙ্গটি রক্ত-লাল রত্ন ও গুপ্ত খোদাইয়ে খোদিত। তাতে টর্চের আলো পড়ে চকচক করে ওঠে। বছরের পর বছর ধরে সে হাঁটে। তার কাপড়, যাকে পোশাক বলা যায় না, তা তার পিছন পিছন টেনে আসে। তার চোখ স্থির ও ঢুলুঢুলু। কারণ অফুরন্ত জীবন পাওয়া অভিশপ্তদের একজন সে। চন্দ্রালোকিত রাতে সে হাঁটতে থাকে যতক্ষণ না পেট্রোস্কি সমাধির লোহার গ্রিলবিশিষ্ট দরজায় পৌঁছায়। এ সমাধিটা বাস্তব। যদিও আরও বাস্তব মাউন্ট প্লেজন্ট সিমেট্রির প্রবেশপথের কাছে পাহাড়ের পাদদেশে অসম্ভাব্যভাবে খোঁড়া হয়েছে এটা।

(মামুলি ও আধ্যাত্বিকের মধ্যবর্তী জায়গাটা পছন্দ করে সেলিনা। সে একবার বলেছিল যে, মহাবিশ্বটা হচ্ছে একটা ডোনাট। সে-ই ব্র্যান্ডের নামটি দিয়েছিল।)

তালা দু’ভাগ হয়। লোহার দরজাটি খুলে যায়। সেলিনা হাজির হয়ে আকস্মিকভাবে শীতল হওয়া চাঁদের দিকে তার দু’বাহু তুলে ধরে। পৃথিবীর পরিবর্তন হয়।

অন্য প্লটও আছে। সেটা শুধু নির্ভর করে কোন পুরাণবিদ্যা থেকে রিচার্ড নকল করছে।

সত্য বিবরণ আছে। সেলিনা একই ধরণের জায়গা থেকে এসেছিল যেখান থেকে রিচার্ড নিজে এসেছে। পুরান ডিপ্রেশন-পূর্ব টরন্টো থেকে। এ এলাকাটি কুইন স্ট্রীটকার রাস্তার দক্ষিনে জলাশয় তীরে অবস্থিত। এখানে ছোট ছোট উলম্ব বাড়ি ছিল। বাড়িগুলো ছেলা কাঠ দিয়ে তৈরি। সামনের দিকে ঝোলানো ও শুকনো বারান্দা ছিল। আর চত্বরগুলো নোংরা অবস্থায় ছিল। সেসব দিনের পুরান সুন্দর ছিল না। সংস্কার করাও হয়নি। কাঙ্খিতও ছিল না। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভরপুর নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির গতানুগতিক বস্তি ধরণের এলাকাটি থেকে যত তাড়াতাড়ি পেরেছিল তত তাড়াতাড়ি সে পালিয়েছিল। কারণ এলাকাটি তাকে তার নিজেরই স্যাঁতস্যাঁতে ঘিঞ্জি সংস্করণ প্রদান করেছিল। সেলিনার উৎসাহের কারণ একই ছিল সম্ভবত। রিচার্ড তা-ই ভাবতে পছন্দ করে।

তারা একই কড়া হাই স্কুলেও গিয়েছিল। যদিও রিচার্ড সেলিনাকে সেখানে কখনও লক্ষ্য করেনি। আর করবেই বা কেন? সে তো সেলিনার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় ছিল। যে সময় নাগাদ সেলিনা, যে কিনা হ্যাংলা, পাতলা, ভীত-সন্ত্রস্ত নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল, সে এসেছিল, সে সময়ে রিচার্ডের বের হয়ে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছিল প্রায়। আর অতি শীঘ্রই খেয়াল করার মতো তার কেউই ছিল না। সেলিনাকে সে সেখানে কল্পনা করতে পারেনি। বিবর্ণ হয়ে যাওয়া একই সবুজ করিডোর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে পারেনি। হাঁটতে হাঁটতে আঁচড় কাটা একই লকারগুলো দ্রুম করে খুলে বন্ধ করতে কল্পনা করতে পারেনি। খাঁচার মতো একই টেবিলের নিচে তার আঁঠা লাগানোও কল্পনা করতে পারেনি।

সেলিনা এবং হাই স্কুল হত ধ্বংসাত্মকভাবে বিপরীত। ঠিক বস্তু ও বিপরীত বস্তুর মতো। রিচার্ড যতবারই স্কুলটার ছবির পাশে সেলিনার ছবির কথা কল্পনা করেছিল, ততবারই তাদের সেলিনা অথবা স্কুলটা তার মনে ভেসে উঠত। আর স্কুলেরটাই সাধারণত ভেসে উঠত।

সেলিনা নামটি তার আসল নাম ছিল না। সে তো শুধু নামটা গ্রহণ করেছিল, যেভাবে তার নতুন, পছন্দমাফিক পরিচয় নির্মাণে সহায়তাকারী অন্য সব কিছুকে গ্রহণ করেছিল। পুরান মার্জোরি নামটা সে বাদ দিয়েছিল। রিচার্ড তার গবেষণায় ভুল করে সেটা জেনেছে। আর তা ভুলে যেতে বৃথা চেষ্টা করেছে।

রিচার্ড প্রথম যখন সেলিনাকে দেখেছিল সেটা তার ফিলিং কার্ডের কোথাও লিপিবদ্ধ করে না। যেসব জিনিস তার মনে থাকার সম্ভাবনা নেই, শুধু সেসব কিছুই সে লিপিবদ্ধ করে রাখে।

সময়টা ছিল ১৯৬০। পঞ্চাশের দশকের শেষ কিংবা ষাটের দশকের শুরু। এটা নির্ভর করে শূন্য সম্পর্কে আপনি কী ভাবেন তার ওপর। পরবর্তীতে সেলিনা একে বলেছিল, ‘সাদা-গরম উজ্জ্বল ডিম/যা থেকে সব কিছু তা পেয়ে বের হয়।‘ কিন্তু রিচার্ড, যে সে সময় বীয়িং এন্ড নাথিংনেস নিয়ে খেটেই যাচ্ছিল, তার মতে সে সময়টা এক ধরণের কানাগলির ইঙ্গিত দিয়েছিল। সে ছিল গ্রাজুয়েট স্কুলের প্রথম বর্ষে। দুঃখজনকভাবে লেখা আন্ডারগ্রাজুয়েট রচনার খাতা দেখে যে সামান্য কিছু অর্থ আসত, তা-ই দিয়ে পড়ালেখা চালাত। বড় ক্লান্ত ও বিরক্ত এবং বয়স্ক লাগত নিজেকে। প্রৌঢ়ত্ব দ্রুত আসছিল। তবে তার বয়স ছিল বাইশ।

মঙ্গলবারের এক রাতে কফি হাউজে সেলিনার সাথে দেখা হয়েছিল রিচার্ডের। রিচার্ড যতদূর জানত এ রকম কফি হাউজ টরন্টোতে আর ছিল না। নাম ছিল বোহেমিয়ান এমব্যাসি। সেখানে যা যা বুর্জোয়া-বিরোধী জিনিস চলার কথা ছিল সেগুলোর কথা মাথায় রেখে এমন নামকরণ করা হয়েছিল। আর তেমন ঘটনা কিছুটা ঘটছিলও। এখানে কখনও কখনও অধিকতর নির্দোষ নাগরিকদের কাছ থেকে চিঠি আসত। এরা ফোন বুকে তালিকা দেখে ভাবত যে, সেটা বাস্তব একটা এমব্যাসি। আর তাই ভ্রমণ ভিসার জন্য লিখত। এ বিষয়টা নিয়মিত আনাগোনাকারীদের মাঝে আনন্দ-উল্লাসের উৎস ছিল। অবশ্য রিচার্ড ঠিক এদের মধ্যে পড়ত না।

কফি হাউজটা ছিল কিছুটা নুড়ি পাথরে ভরা রাস্তার পাশে লুপ্ত একটা ওয়্যারহাউসের দোতলায়। কোনও কার্নিশ ছাড়াই বিপজ্জনক কাঠের সিঁড়ি বেয়ে সেখানে যেতে হত। ভেতরে অনুজ্জ্বল আলো জ্বলত। ধোঁয়ায় পূর্ণ থাকত। আর অগ্নি নির্বাপন বিভাগ মাঝে মাঝে এসে এটা বন্ধ করে দিত। দেয়ালগুলোয় কালো রঙ করা ছিল। আর চেক কাপড় ও ফোঁটায় ফোঁটায় গলা মোমবাতিসহ ছোট ছোট টেবিল ছিল। এসপ্রেসো মেশিনও ছিল। রিচার্ড এই প্রথম এ ধরণের মেশিন দেখেছিল। মেশিনটা বাস্তবে ছিল একটি প্রতীক, যা টরন্টো থেকে দূরে উচ্চতর সংস্কৃতির ইঙ্গিত প্রদান করত। অন্য সংস্কৃতিরও করত। কিন্তু এর সীমাবদ্ধতাও ছিল। জোরে জোরে কবিতা পড়লে, যেমনটা রিচার্ড মাঝে মাঝে পড়ত, কফি বারের পিছনে ম্যাক্স মেশিনটাকে চাঙ্গিয়ে তুলে শ-শ, কলকল শব্দ করাত। যেন কাউকে তাপে ও চাপে সিদ্ধ করে শ্বাসরুদ্ধ করা হচ্ছিল।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার গাওয়া হত লোকগান। সপ্তাহান্তে হত জ্যাজ। রিচার্ড মাঝে মাঝে এসব সঙ্গীত সন্ধ্যায় যেত। কিন্তু পড়ুক আর না পড়ুক সব সময় মঙ্গলবার করে যেত। গানের প্রতিযোগিতাটা যাচাই করে দেখতে চাইত সে। খুব বেশি প্রতিযোগিতা হত না। কিন্তু যেটকু হত আগে-পরে বোহেমিয়ান এমব্যাসিতেই হত।

তরুণরা, যারা বোকার হদ্দ বুর্জোয়া ও সম্মানজনক উপার্জনের শিকল থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজতে চাইত, তাদের জন্য কবিতাই তখন সমাধান ছিল। শতাব্দীর শুরুতে চিত্রকলা যেমনটা ছিল। রিচার্ড এখন ব্যাপারটা জানে। তবে সে সময় জানত না। এ মুহূর্তে এর সমকক্ষ কী সেটা সে জানে না। তার অনুমান বুদ্ধিবৃত্তির ভান যারা করে ছবি বানানো তাদের জন্য। আর যারা করে না তাদের জন্য সেটা দলের মধ্যে ড্রাম বাজানোর মতো। যে দলে এনিম্যাল ফ্যাটস কিংবা দ্য লিভিং স্নটের মতো বিতৃষ্ণাজনক নাম আছে। তার সাতাশ বছর বয়সী ছেলেই এর নমুনা। রিচার্ড অবশ্য খুব একটা নজর রাখতে পারে না। কারণ ছেলেটি রিচার্ডের প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে থাকে। (তবুও! তার বয়সে! রিচার্ড যথেষ্ট তিক্ততাভরে ভেবে পায় না কেন সে একটা ঘর, একটা অ্যাপার্টমেন্ট, একটা চাকুরি খুঁজে নেয় না। রিচার্ড এখন বোঝে, যে কালো টার্টলনেক সোয়েটার সে পরত, দাড়িতে যে অপরিচ্ছন্ন চেষ্টা চালাত, ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’ এর নিয়মিত রবিবাসরীয় ভোজের মাংস ও আলু নিয়ে এবং পরবর্তীতে আরও কার্যকরভাবে জিন্সবার্গের ‘হাউল’ নিয়ে যে বিষোদগার করত, তাতে তার নিজের বাবা কতটা জ্বালাতন ভোগ করত। সে মনে মনে বলে, অন্তত অর্থ খুঁজতে আগ্রহী ছিল সে। কিংবা শব্দ খুঁজতে। অন্ততপক্ষে শব্দে আগ্রহী ছিল।)

তখন সে শব্দ ব্যবহারে ভালো ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে তার কয়েকটা কবিতা ছাপা হয়েছিল। আরও দুটি ম্যাগাজিনেও ছাপা হয়েছিল, যেগুলোর মধ্যে একটির মিমিওগ্রাফ কপি ছিল না। এসব কবিতা ছাপার অক্ষরে দেখে এবং নিচে তার নিজের নাম দেখে সে টি. এস. এলিয়েটের মতো করে আদ্যাক্ষর ব্যবহার করত নিজেকে একটু বয়স্ক বোধ করানোর জন্য। আগের যে কোনও কিছুর চেয়ে ছাপার অক্ষরে তার কবিতা ও নাম ব্যবহার তাকে অধিকতর সন্তুষ্টি এনে দিয়েছিল। কিন্তু সে একটা ভুল করেছিল। তার বাবাকে এই ম্যাগাজিনগুলোর একটা দেখিয়েছিল। তিনি ডাকঘরের নিম্ন-মধ্য ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত ছিলেন। এতে সে ভ্রুকুটি ও উষ্মা ছাড়া আর কিছু পায়নি। কিন্তু তার ভাড়া নেওয়া ঘরে ফেরার পথে সদ্য ধোয়া এক ব্যাগ কাপড়-চোপড় নিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিল, তখন সে শুনতে পেয়েছিল যে,  তার বৃদ্ধ লোকটি তার মাকে তারই মুক্ত-ছন্দের এন্টি-সনেট জোরে জোরে পড়ে শোনাচ্ছিলেন। আর তার মায়ের অনুমোদনহীন, আগাম জানা কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এখন তাহলে জন! ওর ওপর এত কঠোর হয়ো না!’

এন্টি-সনেটটি ছিল ম্যারি জোকে নিয়ে। মোটাসোটা, বাস্তববাদী একটা মেয়ে যার আধা-সোনালি চুলগুলো কাঁধ পর্যন্ত এসে পড়ত এবং যে গ্রন্থাগারে কাজ করত। এ মেয়ের সাথেই রিচার্ডের একটা সম্পর্ক হচ্ছিল প্রায়। রিচার্ডের বাবা জোরে পড়েছিলেন, ‘তোমার চোখে ডুবে যাই আমি। প্রাচীন জলাভূমির চোখ! হায়, স্তনাগ্র পর্যন্ত নিচে নামলে রিচার্ড কী করবে?’

আর তার মা তাদের প্রাচীন ষড়যন্ত্রে নিজের ভূমিকা রেখে বলেছিলেন, ‘এখন তাহলে জন! আসলেই! হায় ভাষা!’

রিচার্ড অবশ্য মনে মনে কঠোরভাবে বলেছিল যে, সে কারও পরোয়া করে না। তার বাবা তো রিডার’স ডাইজেস্ট  এবং যুদ্ধের ওপর খারাপ পেপারব্যাক ছাড়া আর কিছু পড়েননি। তা তিনি কী জানতেন?

সেই নির্দিষ্ট মঙ্গলবারেই রিচার্ড মুক্ত ছন্দটা পরিত্যাগ করেছিল। এত সহজ ছিল। আরও কাঠিন্য, আরও কাঠামোবিশিষ্ট কিছু একটা চেয়েছিল সে। চেয়েছিল এমন কিছু যা অন্য সবাই করতে পারবে না। এখন এটাই সে নিজে নিজে স্বীকার করে।

সন্ধ্যার প্রথম প্রহরে সে তার নিজের জিনিস পড়ত। প্রথমে পড়ত পাঁচটি সেস্টিনা (ছয় লাইনের ছয় স্তবকবিশিষ্ট কবিতা)। পরে পড়ত একটি ভিলানেল (১৯ লাইনের কবিতা)। তার কবিতাগুলো ছিলো মার্জিত ও জটিল। নিজের কবিতা নিয়ে খুশিই ছিল সে। শেষের এসপ্রেসো বানানোর সময় মেশিনটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সে ম্যাক্সকে সন্দেহ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু কয়েক জন বলেছিল, ‘শ…শ’। কবিতা পড়া শেষ করলে মৃদু করতালি হত। রিচার্ড তার নির্ধারিত কোণায় গিয়ে বসে চুপি চুপি পিঠ চুলকাত। কালো সোয়েটারটার কারণে তার ফুস্কুড়ি উঠেছিল। যে-ই শুনতে চাইত তাকেই তার মা সব সময় বলে দিত যে, রিচার্ডের চামড়া নাজুক।

রিচার্ডের পর এসেছিলেন পশ্চিম উপকূল থেকে আগত বাদামি চুলের এক বৃদ্ধা কবি। তিনি দীর্ঘ একটা কবিতা পাঠ করেছিলেন। কবিতাটিতে বর্ণনা করা হয়েছিল যে, তার দু’উরুর মধ্যে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। এ কবিতায় গোপনীয়তার মৃদুমন্দ প্রকাশ ছিল। ছিল দায়সারা চার অক্ষরের শব্দ। এর কিছুই আপনি অ্যালেন গিনসবার্গে খুঁজে পাবেন না। কিন্তু রিচার্ড শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিল। কবিতা পাঠের পর বৃদ্ধাটি গিয়ে বসেছিল রিচার্ডের পাশে। রিচার্ডের হাত চেপে ধরে কানে কানে বলেছিলেন, ‘তোমার কবিতা তো সুন্দর।‘ তারপর রিচার্ডের চোখ বরাবর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তার স্কার্টটি উরুর ওপর তুলেছিলেন। চেকের টেবিলক্লথ ও ধোঁয়াশা পরিবেশ মিলে এ ঘটনাটি বাকি রূম থেকে ঢাকা পড়েছিল। কিন্তু এটা এক ধরণের স্পষ্ট আমন্ত্রণ ছিল। উইপোকায় খাওয়া যে আতঙ্কই তিনি সেখানটায় গুঁজে রেখেছিলেন তাতে একটু উঁকি দিয়ে দেখার জন্য রিচার্ডকে তিনি সাহসের সাথে আহবান জানিয়েছিলেন।

রিচার্ডের শীতল রাগ হচ্ছিল। তার মুখে লালা আসার কথা ছিল। কোনও বিকারগ্রস্ত বানরের মতো সিঁড়িতে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা ছিল। পুরুষদের সম্পর্কে এ রকম ধারণা পোষণকে সে ঘৃণা করত। ঘৃণা করত ডিপ-স্টিক যৌনতা ও লালা ঝরানোকে। ঘৃণা করত বোকার মতো কামভাব জাগানোকে। তাকে একটা ঘুষি মারতে ইচ্ছে হচ্ছিল রিচার্ডের। কম করে হলেও তার বয়স হবে পঞ্চাশ।

রিচার্ড মন খারাপ করে লক্ষ্য করে যে, সে এখন এ বয়সটাতে আছে। সেলিনা এই একটা জিনিস থেকে পলায়ন করেছে। রিচার্ড একে পলায়নই ভাবে।


                                ২য় পর্ব

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*