ওয়াইল্ডারনেস টিপস – অনুবাদ

গল্প

ওয়াইল্ডারনেস টিপস

ওয়াইল্ডারনেস টিপস

মূল: মার্গারেট এটউড

অনুবাদ: সেলিম মিয়া


পোর্শিয়া বলে, ‘তুমি কি ভালো মতো পড়েছিলে? আশা করি রোদে পুড়ে যাওনি। কোনও খবর আছে?’

পামেলা বলে, ‘তুমি একে খবর বলছ, ঐ পত্রিকা এক সপ্তাহের পুরানো। খবর(নিউজ) কেন বহুবচন? আমরা কেন বলি না ‘”প্রাচীনগুলো (ওল্ডস)”?’

এক থালা খাবার এনে প্রু বলে, ‘জর্জ তো পুরানো জিনিস পছন্দ করে।‘ রুমাল সজ্জার ওপর পুরুষদের শাদা শার্ট পরেছে সে, তবে বোতাম লাগায়নি। ‘আমাদের নারীদের জন্য সৌভাগ্যময়, তাই না? সবাই হাপুস-হুপুস খেয়ে নাও। মজার মজার পনির ও চাটনি স্যান্ডউইচ এবং সুস্বাদু সার্ডিন মাছ। জর্জ? বিয়ার খাবে না এসিড বৃষ্টি?’

জর্জ বিয়ার পান করে, খায় এবং হাসে, খায় এবং হাসে। অন্যদিকে রোলান্ড ছাড়া পরিবারের সবাই তাকে নিয়ে কথা বলে। রোলান্ড গাছগুলির মধ্য দিয়ে জলাশয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তার পুষ্টি গ্রহণ করে। তার চোখদুটো স্থির থাকে। মাঝে মাঝে জর্জ ভাবে যে, পটভূমির সাথে মিশে যেতে রোলান্ড হালকা রঙ বদলাতে পারে। কিন্তু জর্জ থেকে ভিন্ন রোলান্ডকে অবধারিতভাবেই আলাদা করে চেনা যায়।

পোরা পাখিদের নিয়ে পামেলা আবার অভিযোগ তুলছে। ড্রয়িং রুমে কাচের বেলের নিচে তিনটা পাখি রাখা আছে—একটা হাঁস, একটা লুন, একটা মেঠো মোরগ। এ ধারণাগুলো ছিল পিতামহের। উদ্দেশ্য ছিল সাধারণভাবে লজের মতো সাজসজ্জার ধরণের সাথে মেলানো। যেমন— খোস পাঁচড়া আক্রান্ত ভাল্লুকের চামড়ার কার্পেট যা নখর ও মাথা দিয়ে পরিপূর্ণ, অগ্নিস্থানের ওপরের তাকে ভূর্জবৃক্ষ বাকলের অনুচিত্র, অগ্নিস্থানের ওপরে আড়াআড়ি থাকা ফাটা ও শুকনা তুষার-জুতা, দেয়ালে পেরেকবিদ্ধ ও উইপোকা পরিবেষ্টিত হাডসন’স বে- এর কম্বল। পামেলা নিশ্চিত যে, পোরা পাখিগুলোকেও উইপোকায় খাবে।

সে বলে, ‘ভেতরে ভেতরে ওগুলো সম্ভবত এক সাগর পোকার ডিম।‘ আর এক সাগর পোকার ডিম দেখতে কেমন জর্জ তার ছবি কল্পনা করার চেষ্টা করে। এটা তো তার রূপকশোভিত উল্লম্ফন, শব্দ-জটের মাল্য—যা জর্জকে বিভ্রান্ত করে।

প্রু বলে, ‘ওগুলো তো হাওয়াবদ্ধ করে সিল করা। তুমি তো জান যে, কোনও কিছুই ভেতরে ঢোকে না, আবার কোনও কিছুই বাইরে যায় না। সন্নাসিনীদের মতো।‘

পামেলা বলে, ‘বিতৃষ্ণা জাগিও না। লার্ভা বর্জ্য আছে কিনা আমাদের দেখা উচিত।‘

প্রু বলে, ‘কাদের? সন্নাসিনীদের?’

জর্জ বলে, ‘লার্ভা বর্জ্য কী জিনিস?’

জর্জের দিকে না তাকিয়ে পামেলা বলে, ‘পোকার গু। আমরা ওগুলো হিম-শুষ্ক করতে পারি।‘

প্রু বলে, ‘এতে কি কাজ হবে?’

প্রু হচ্ছে শহরে চলতি ধারায় প্রথম—প্রথম শাদা রান্নাঘর, বিশাল কাঁধ প্যাডের প্রথম সেট, প্রথম চামড়ার স্যূট-প্যান্ট অনেক বছর ধরে তারই ছিল। সে বাকিদের বদলে দিতে রোধক হিসেবে আছে এখানে। সে চায় এ উপদ্বীপের সব কিছু ঠিক সেভাবেই থাকুক যেভাবে সব সময় ছিল। আর থাকেও তা-ই, যদিও ধীরে ধীরে একটু-আধটু জীর্ণতায় পর্যবসিত হয়। জর্জ অবশ্য জীর্ণতায় কিছু মনে করে না। ওয়াকুস্টা লজ অতীতের একটু টুকরো, একটা অচেনা অতীত। সে সম্মানিত বোধ করে।

প্ল্যাস্টিকের তলাবিশিষ্ট উচ্চ গতিসম্পন্ন একটা মোটর-নৌকা খুব কাছ দিয়ে চলে যায়। রোলান্ডের গাও ছম ছম করে ওঠে। তার ছম ছম ভাবে ডকটি নড়ে ওঠে।

পোরা পাখির প্রশ্নে পোর্শিয়া খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। তো সে বলে, ‘ওগুলো আমি ঘৃণা করি। আরেকটা স্যান্ডউইচ, সোনা।‘

পামেলা বলে, ‘যুদ্ধের সময়টায় এত সুন্দর ও শান্ত ছিল এখানে। জর্জ, তোমার কিন্তু এখানে থেকে যাওযা উচিৎ ছিল।‘ অভিযোগের সুরে বলে সে যেন দোষটা জর্জের যে, সে ছিল না। ‘গ্যাস রেশনিংয়ের জন্য মোটরের নৌকা তো দেখাই যেত না। ছিল শুধু ক্যানো। অবশ্য রাস্তাঘাট তখন নির্মিত হয় নাই। কেবল ট্রেন ছিল। আমি ভেবে পাই না আমরা কেন ‘চিন্তার ট্রেন’ বলি, কিন্তু কখনও ‘চিন্তার গাড়ি’ বলি না?’

প্রু বলে, ‘আর দাঁড়টানা নৌকা। আমার মনে হয় মোটর নৌকার ঐসব লোকদের নামিয়ে গুলি করা উচিৎ। অন্ততপক্ষে তাদের যারা খুব বেশি দ্রুত যায়।‘ প্রু নিজেই পাগলের মতো চালায়, তবে শুধু মাটিতে।

জর্জ অনেক জনকে মোটর নৌকা থেকে নামিয়ে গুলি খেতে দেখেছে। অবশ্য মোটর নৌকা চালানোর জন্য নয়। তো জর্জ হেসে নিজেই একটা সার্ডিন মাছ তুলে নেয়। একবার সে নিজে তিনজনকে গুলি করেছিল, যদিও শুধু তাদের দুজনকেই করা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। তৃতীয় জনেরটা ছিল পূর্ব-সতর্কতা। এখনও সেটা নিয়ে সে অস্বস্তি বোধ করে। সম্ভাব্য নির্দোষজনকে নিয়ে অস্বস্তি বোধ করে, যার অতি নিস্পাপ চোখ জানান দিয়েছিল, যার শার্টের সামনটা রক্তের ফোঁটায় ভরে গিয়েছিল। কিন্তু মধাহ্ন ভোজনের সময় কিংবা অন্য কোনও সময় এটা উল্লেখ করে তেমন লাভ হবে না। চমকে দেওয়ার কোনও ইচ্ছেই নেই জর্জের।

প্রুই তাকে উত্তরে এনেছিল, তাদের প্রথম সম্পর্কের সময় এখানে এনেছিল। (কতগুলো সম্পর্ক ছিল? তারা কি আলাদা হতে পারে? কিংবা বিরতি দিয়ে দীর্ঘ একটা সম্পর্ক আসলেই আছে থোকা থোকা সসেজের মতো? বিরতি ছিল প্রুর বিয়েগুলোতে, যা কখনও বেশিদিন টেকেনি। কারণ তাদের সময়ে সে ছিল একগামী। জর্জ জানত বিয়ের সমাপ্তি কখন ঘনিয়ে আসে। তার অফিসে ফোন বাজত। আর ফোনটা ছিল প্রুর, যে বলত, ‘জর্জ, আমি পারছি না। এত ভাল ছিলাম আমি, কিন্তু চালিয়ে যেতে পারছি না। আমি যখন দাঁত ফ্লস করি, তখন সে বাথরুমে আসে। এক তলা থেকে আরেক তলার মধ্যে আটকে গিয়ে তোমার সাথে লিফটে থেকে যেতে চাই আমি। আমাকে নোংরা কিছু একটা বলো। আমি প্রেম ঘৃণা করি, তুমি করো না?)

এখানে জর্জের প্রথম সময়টা গেছে শৃঙ্খলে আবদ্ধ থেকে, প্রুর পথ অনুসরণ করে রোমান বিজয়ে বর্বরদের মতো। সুনির্দিষ্ট এক বন্দী, ইচ্ছাকৃত এক নৃশংসতাও। জর্জের কথা ছিল প্রুর পরিবারকে সতর্ক করার। আর সে করেছিলও তা-ই, যদিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নয়। জর্জের ইংরেজি ভালো ছিল না। তার চুল ছিল চকচকে। জুতাও ছিল খোঁচা খোঁচা। তার পোশাক-আশাকও ছিল পরিপাটিরূপে ইস্ত্রি করা। কালো চশমা পরত, হাতে চুমু খেত। মা তখন জীবিত ছিলেন, যদিও বাবা ছিলেন না। তাই চারজন নারী তার বিরুদ্ধে লেগে ছিল। আর অবোধগম্য রোলান্ডের কাছ থেকে কোনও সাহায্যই মিলত না।

প্রু ডকে বসে বলেছিল, ‘মা, এ হচ্ছে জর্জ।‘ সেখানে তারা সবাই পূর্ব-পুরুষের ফোল্ডিং চেয়ারে বসেছিল। মেয়েরা গোসলের পোশাকের ওপর শার্ট পরেছিল, আর মা পরেছিল হালকা রঙের ডোরাকাটা কাপড়। প্রু আরও বলেছিল, ‘এটা তার আসল নাম না, তবে উচ্চারণ করা সহজ। বন্য প্রাণী দেখতে এখানে এসেছে সে।‘

মায়ের রোদে দাগ পড়া হাতে চুমু খেতে জর্জ ঝুঁকে পড়েছিল। এতে তার সানগ্লাস জলাশয়ে পড়ে গিয়েছিল। মা তখন বিপাকের কু-কু ধ্বনি তুলেছিল। প্রু হেসে উঠেছিল। রোলান্ড জর্জকে উপেক্ষা করেছিল। আর পামেলা বিরক্তিভরে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু পোর্শিয়া—সুন্দরী, ছোট হাড়ের পোর্শিয়া, যার মখমলের চোখ আছে—টু শব্দটি না করে তার শার্ট খুলে জলাশয়ে লাফিয়ে পড়েছিল। তার কালো সানগ্লাসটি উদ্ধার করে, দ্বিধাগ্রস্তভাবে হাসি দিয়ে, পানি থেকে তুলে জর্জের হাতে দিয়েছিল। পোর্শিয়ার ভেজা চুল থেকে পানি টিপ টিপ করে পানি ঝরে পড়ছিল তার ছোট ছোট স্তনের ওপর। যেন আর্ট নূভো ঝর্ণার ওপর দেবীর স্তনে পানি ঝরে ঝরে পড়ছে। আর জর্জ তখন জানত যে, পোর্শিয়াই সেই মেয়ে যাকে সে বিয়ে করবে। সৌজন্য, কৌশলের নারী, স্বল্পভাষী তার জন্য খুব ভালো হবে, তার পরিপূরক হিসেব কাজ করবে, যে জিনিস সে ফেলে দেবে এই নারী তা কুড়ে তুলে রাখবে।

বিকেলবেলা নৌঘর থেকে ক্যানভাস আবৃত ফুটা একটা ক্যানো করে নৌভ্রমণের জন্য প্রু জর্জকে নিয়েছিল। জর্জ সামনে বসে ছিল। প্যাডল দিয়ে পানিতে আনাড়ির মতো ঠেলছিল। আর ভাবছিল কীভাবে পোর্শিয়াকে তার সাথে বিয়েতে রাজি করাবে। তাদেরকে এক শিলাখন্ডে নামিয়ে দিয়ে প্রু জর্জকে নিয়ে গাছ-গাছালির মধ্যে গিয়েছিল। সে চেয়েছিল বল্গা হরিণ শেওলা ও দেবদারুর সুচকাঁটার ওপর জর্জ তার সাথে নিজের স্বাভাবিক লম্পট, সহিংস, অদ্ভূৎ রূপের প্রেম করুক। চেয়েছিল পারিবারিক কিছু নিষিদ্ধ রীতিনীতি ভাঙতে। অসম্মানটাই তার মনে ছিল। জর্জের কাছে সেটা পরিষ্কার ছিল যেন সে এটা পড়ে ফেলেছে। কিন্তু জর্জের ইতোমধ্যে আক্রমণ পরিকল্পনা করা ছিল। তাই সে প্রুকে দূরে রেখেছিল। ওয়াকুস্টা লজটিকে অপবিত্র করতে চায়নি সে। চেয়েছিল একে বিয়ে করতে।

সেই সন্ধ্যায় নৈশভোজনে মায়ের আনুকুল্যে তিন মেয়েকেই সে উপেক্ষা করেছিল। মা ছিলেন অভিভাবক, ছিলেন চাবি। দুর্বল শব্দভাণ্ডার থাকা সত্ত্বেও জর্জ হতে পারে ধ্বংসাত্মকভাবে মনোরম, যেমনটা প্রু সবাইকে ঘোষণা করেছিল তাদের চিকেন-নুডল স্যূপ খাওয়ার সময়।

কেরোসিন ল্যাম্পের আলোতে জর্জ তার জ্বল জ্বলে শিকারি চোখদুটো বাঁকিয়ে মাকে বলেছিল, ‘ওয়াকুস্টা লজ, এটা এত রোমান্টিক। ইন্ডিয়ান আদিবাসীর নাম এটা?‘

প্রু হেসে দিয়েছিল। বলেছিল, ‘এর নামকরণ করা হয়েছে নির্বোধ কোনও বইয়ের নামে। দাদার দাদা যে এটা পছন্দ করেছিল তার কারণ একজন জেনারেল এটা লিখেছিল।‘

পামেলা মুখ শক্ত করে বলেছিল, ‘একজন মেজর। ঊনবিংশ শতকে। মেজর রিচার্ডসন।‘

এ জিনিসটা স্থানীয় ঐতিহ্যের ইতোমধ্যে বর্ধিষ্ণু ভাণ্ডারে যোগ করে জর্জ বলেছিল, ‘আহ?’। এখানে বই ছিল তাহলে, আর বাড়িগুলো সেগুলোর নামে নামকরণ করা হয়েছিল! বইয়ের বিষয়বস্তুর সম্পর্কে বেশিরভাগ লোকই ছিল করুণ। একটু আগ্রহ দেখাতেও তা হয়ে থাকবে। যা হোক, সে আগ্রহী ছিল। তবে এ বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন দেখা গিয়েছিল যে, নারীদের কেউই এটা পড়েনি।

অপ্রত্যাশিতভাবে রোলান্ড বলেছিল, ‘আমি পড়েছি।‘

জর্জ বলেছিল, ‘তাই নাকি?’

‘যুদ্ধ নিয়ে বইটা।‘

উদাস হয়ে মা বলেছিল, ‘বইটা ড্রয়িং রুমের তাকে আছে। রাতের খাবার শেষে তুমি দেখতে পার, যদি তুমি অতটাই মুগ্ধ হয়ে থাক।‘

(প্রু ব্যাখ্যা করেছিল) মেয়েদের অনুপ্রাসমূলক নামের ব্যাপারে মায়েরই দোষ ছিল। তিনি ছিলেন খামখেয়ালী নারী, যদিও ধর্ষকামী ছিলেন না। এটা তো বয়সের ব্যাপার যখন পিতামাতা তা করে। তারা মিল রেখে তাদের সন্তানের নাম রাখে, যেন বর্ণমালার বই থেকে তারা বেরিয়ে এসেছে। বিয়ার, বাম্বলবী, বানি (ভাল্লুক, ভ্রমর, খরগোশ)। ম্যারি ও মার্জোরি মুর্কিসন। ড্যাভিড ও ডার্লিন ড্যালি। কেউ আর সেটা করেনি। অবশ্য মা নামে ক্ষান্ত হননি, তবে ডাক নামে বদলে দিয়েছিলেন—প্যাম, প্রু, পোর্শ। প্রু ডাক নামটিই টিকে আছে। পামেলা নামটি এখন খুবই মর্যাদাশীল। আর পোর্শিয়া বলে যে, গাড়ির নামের সাথে গুলিয়ে ফেলার জন্য তার ডাক নামটি এরই মধ্যে যথেষ্ট খারাপ। কেন যে সে শুধু আদ্যক্ষরে নাম রাখতে পারে না।?


১ম পর্ব                                                                                                                                  ৩য় পর্ব

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*